নায়ক রাজ বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একজন অভিনেতারই ছবি। অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়ে দর্শকের হৃদয় জয় করে আছেন তিনি। ছুটির ঘণ্টার স্কুল দফতরি, জীবন থেকে নেয়ার বিপ্লবী তরুণ, রংবাজ ছবিতে ক্ষয়ে যাওয়া সমাজে প্রতিবাদী এক যুবকের চরিত্র অন্যতম।
দেখতে দেখতে তিনটি বছর কেটে গেল। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট মারা যান আমাদের সকলে প্রিয় নায়ক, রাজ রাজ্জাক। মৃত্যুর এই বার্ষিকীতে তাকে আলাদাভাবে স্মরণ করছে পরিবার, ভক্ত ও স্বজনেরা।
নায়কের এক বাল্যবন্ধু বলেছিলেন, তিনি নাকি অঙ্কে কাঁচা। তবে সবই খাতার অঙ্কে, বইয়ের অঙ্কে। জীবনের অঙ্কে তিনি এক অনন্য সমাধানের নাম। জীবনের জটিল সব চরিত্রের অঙ্ক সমাধানে তিনি ছিলেন অসাধারণ। সকল চরিত্রে তিনি ছিলেন সাবলীল।
তাঁর পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক। চলচ্চিত্রে তিনি শুধু রাজ্জাক নামে আবির্ভূত হন। সিনেমা জীবনে দীর্ঘ পথচলায় একের পর এক সাফল্যকে মুঠোবন্দি করেন তিনি। হয়ে ওঠেন এক অনন্য মানুষ।
অভাবনীয় সাফল্যের গুণে তিনি ভূষিত হন ‘নায়করাজ’ উপাধিতে। আর এ উপাধি তাকে দিয়েছিলেন প্রয়াত খ্যাতিমান সাংবাদিক, চিত্রালি সম্পাদক আহমদ জামান চৌধুরী।
রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩শে জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আকবর হোসেন ও মাতার নাম নিসারুননেছা। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা মঞ্চ নাটক ’বিদ্রোহীতে’ গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই তাঁর পথচলা শুরু।
লোককাহিনী নিয়ে জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবির নায়ক হিসেবে দর্শকের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্জাক। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বেহুলা’ ছিল সুপারহিট। এরপর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রাজ্জাককে।
পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মোট ১৮ জন নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি। সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছেন নায়িকা শাবানার বিপরীতে, ৪০টি সিনেমায়। এ তালিকায় দ্বিতীয় হচ্ছেন ববিতা। তার সঙ্গে অভিনীত ছবির সংখ্যা ৩৯টি।
রাজ্জাক ১৯৯০ সাল পর্যন্ত নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। নায়ক হিসেবে তার অভিনীত শেষ ছবি ‘মালামতি’। নায়ক চরিত্রের বাইরে ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন।
এছাড়া নায়িকা কবরীর সঙ্গে তৈরি হয়েছিল নায়করাজের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘আবির্ভাব’ ছবিতে রাজ্জাক-কবরী জুটিকে দর্শক পর্দায় প্রথম দেখেন।
নায়ক ছাড়া পরিচালক হিসেবেও রাজ্জাক ছিলেন সফল। চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা হলেও টেলিভিশনের প্রতি নায়করাজ রাজ্জাকের ছিল ব্যাপক আগ্রহ। ক্যারিয়ারের শুরুতে ‘ঘরোয়া’ নামের একটি টিভি নাটকে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি।
নায়ক রাজ রাজ্জাক ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপতালে মৃত্যুবরণ করেন। পরে এ অভিনেতাকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
সূত্র : যমুনা টিভি