সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

spot_img
spot_img

মানব দেহের জৈব সার

মানুষ মরে গেলে কবর দেয়া কিংবা পুড়িয়ে ফেলা হয়।কোথাও আবার ভাসিয়ে দেয়া হয় নদী কিংবা সাগরে। বিশ্ব জুড়েই স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে নানা ভাবে মৃতদেহের সৎকারের রীতি আছে। তবে মৃত দেহ পোড়ানোর কারণে বাতাসে যে কার্বন নি:সরণ হয় তা কমিয়ে আনতে গেল ফেব্রুয়ারিতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্য। এই রাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠান মৃত দেহকে জৈব সারে রূপান্তরের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে।আগামী বছর থেকে বাণিজ্য ভাবে উৎপাদন শুরুর কথা আছে।

রিকম্পোস নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সফলতাও পেয়েছে। যে উপায়ে মৃত দেহকে জৈব সারে রূপান্তর করা হচ্ছে তা বৈজ্ঞানিক ভাবেও গ্রহণযোগ্যে,এমন দাবী করছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ক্যাটরিনা স্পেড। বিবিসিকে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে এই উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ১৫ হাজার মানুষ আমাদের এ উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে।

ওয়াশিংটন রাজ্য সরকারও এর আইনী অনুমোদন দিয়েছে। আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সাইন্স মিটিংয়ে উদ্যোগটি গৃহীত হয়েছে বলেও তিনি জানান। ১৩ বছর ধরে এই ধরনের কাজ করার কথা ভাবছিলেন ক্যাটরিনা স্পেড।

তিনি বলেন,আমি মারা গেলে এই পৃথিবীকে কী দিয়ে যাবো সেই ভাবনা থেকে এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমার দেহ থেকে তৈরি হওয়া জৈব সার যদি মাটিতে একটি প্রাণেরও সঞ্চার করে তা হবে আমার জন্য বড় পাওয়া। তিনি জানান,একটি মানব দেহ পুড়ালে অন্তত ১.৪ টন কার্বন নি:সরণ হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী কার্বনকে কমিয়ে আনতে মৃতদেহের সৎকার না করে জৈবসারে রূপান্তর একটি সাহসী উদ্যোগ বলেও তিনি মনে করেন। জৈব সারে রূপান্তরের জন্য পচনে সহায়তকারী ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে মৃত দেহকে আস্তে আস্তে ভাঙ্গা হয়।দেহটি একটি ড্রামে রেখে ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে ভাঙ্গার কাজটি করা হয়।এই প্রক্রিয়ায় একটি মৃত দেহকে জৈবসারে রূপান্তর করতে এক মাসের মত সময় লাগে।

ক্যাটরিনা জানান,গেল ৪ বছরের বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার ফল এই জৈব সার উৎপদান পদ্ধতি। এই উদ্যোগের সাথে ওয়াশিংটন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞানী অধ্যাপক লিনি কার্পেন্টার বগসও ছিলেন।তিনি জানান,জীব-জন্তুর দেহকে জৈব সারে রূপান্তর করা ওয়াশিংটন রাজ্যে একটি পরিচিত পদ্ধতি। প্রায় একই ধরনের পদ্ধতি এখন মানুষের মৃত দেহের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটন রাজ্যের যে কেউ এই উদ্যোগে যোগ দিতে পারে। এমন আহবান জানিয়ে ক্যাটরিনা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ভবিষ্যতে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো রাজ্যে ছড়িয়ে পড়বে।পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও এটি জনপ্রিয়তা পাবে।তার আশা,অন্যান্য অঙ্গরাজ্যও তাদের ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করবে। যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের অনেক জায়গা থেকেই অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন,ভবিষ্যতে হয়তো তাদের বৈশ্বিক শাখাও খোলার প্রয়োজন হতে পারে।

(তথ্যসূত্র:https://www.bbc.com/news/science-environment-51389084‌)

মন্তব্য করুন:

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বাধিক পঠিত